ইটালি অভিমুখী অভিবাসীদের ঢল, ২০২১-এ শীর্ষে বাংলাদেশি অভিবাসীরা!

google news

করোনা মহামারীতে থেমে গেছে পৃথিবী। কিন্তু থেমে নেই ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসীদের ঢল। বাংলাদেশিরা নৌপথে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন৷

এই প্রবণতা চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট৷পত্রিকাটি বলছে, এই কাজে জড়িত আছে আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র৷

এদিকে এক প্রতিবেদনে ইনফোমাইগ্রান্টস.নেট জানিয়েছে, ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ইটালিতে ১৫ হাজারের বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী পাড়ি জমিয়েছেন৷ এই সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি৷

গত সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে৷

চলতি বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে প্রবেশের প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে৷ প্রতি সপ্তাহেই কয়েকশো মানুষ পৌঁছাচ্ছেন দেশটির সীমান্তে৷ শুধু জুনেই ৩৭৩ জন দক্ষিণ ভূমধ্যসাগর উপকূলে পৌঁছান৷

বিপদজনক উপায়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকে মারাও গেছেন৷ সব মিলিয়ে গত পাঁচ মাসে দেশটিতে আসা শরণার্থী ও অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৫ জনে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় তিনগুণ বেশি৷

২০১৯ সালের প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে এটি সাতগুণ বেশি৷ এর আগে ইটালি সরকারের প্রকাশিত আরেক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছিল, ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ মে পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকার উপকূল ছেড়ে প্রায় ১৩ হাজার ৩০০ মানুষ নৌকায় লাম্পেদুসা ও সিসিলিতে পৌঁছেছেন৷

নতুন আগতদের মধ্যে ১৭ শতাংশই বাংলাদেশি৷ দেশভিত্তিক হিসাবে এরপরই রয়েছে টিউনিসিয়া (১৪ শতাংশ), আইভরি কোস্ট (১০ শতাংশ), ইরিত্রিয়া (সাত শতাংশ) থেকে আসা অভিবাসী৷

এছাড়া ছয় শতাংশ এসেছেন মিশর ও গিনি থেকে৷ এদের মধ্যে অনেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে নৌকায় করে ইটালির উপকূলে এসে পৌঁছান৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও ইটালির কোস্ট গার্ড বাকিদের সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেছে৷

এদিকে নতুন অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে ইইউ সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রোম৷ তাতে সাড়া দিয়ে গত মাসে আয়ারল্যান্ড দশজন আশ্রয়প্রার্থীকে স্বাগত জানানোর ঘোষণা দিয়েছে৷

ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ইটালি সরকার অভিবাসীদের চাপ সামলাতে টিউনিসিয়া ও লিবিয়ার সঙ্গে চুক্তির চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে৷

ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা, বাড়ছে প্রাণহানি

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক অভিবাসীই প্রাণ হারাচ্ছেন৷ চলতি মাসের শুরুতে লিবিয়া থেকে ৯০ অভিবাসী নিয়ে যাত্রা করা একটি নৌকা টিউনিশিয়া উপকূলে ডুবে গেছে বলে জানিয়েছে রেডক্রস৷

ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে ৭০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও কমপক্ষে ২৩ জন মারা গেছেন৷ তার আগের সপ্তাহে টিউনিশিয়া উপকূলে প্রায় ১২০ জন অভিবাসী মৃত্যুবরণ করেন। তারা সমুদ্র পথে ইটালি পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন৷

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন-ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ‘‘লিবিয়া ও টিউনিশিয়া থেকে ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার যাত্রার ঘটনা ঘটেছে৷

যেটি গত বছরের একই সময়ের চেয় ৭৩ শতাংশ বেশি। যাত্রাকালীন দেশগুলোতে শরণার্থীরা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছেন৷’’

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর মধ্য ভূমধ্যসাগরে চার হাজার ৮০ জন অভিবাসী মারা গেছেন৷

২০২১ সালে ইটালি পৌঁছেছে ১০ হাজার অভিবাসী, বাংলাদেশি ১,০১৪

ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২১ সালে এরই মধ্যে ১০ হাজার অভিবাসী পৌঁছেছে দেশটিতে৷ গত বছর এই সময়ের চেয়ে যা প্রায় তিনগুণ৷

এনজিও সি-ওয়াচ’র সহায়তায় আসা ৪৫৫ জন অভিবাসী এই তালিকার বাইরে৷

৩রা মে ইটালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত হালনাগাদ তালিকায় এই বছর পৌঁছানো অভিবাসীদের সংখ্যা জানানো হয়৷

এতে দেখা যায়, এ বছর জানুয়ারি থেকে ৩রা মে পর্যন্ত ১০ হাজার ১০৭ জন নতুন অভিবাসী পৌঁছেছে ইটালিতে৷

এর পরদিন ৪ঠা মে এনজিও সি ওয়াচের সহায়তায় ৪৫৫ জন অভিবাসীকে ইটালিতে নিয়ে আসে হয়৷

গত বছর জানুয়ারি থেকে ৩রা মে পর্যন্ত ইটালিতে ৩,৫৭৩ জন অভিবাসী প্রবেশ করেছিলো৷

মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মে মাসের প্রথম তিনদিনে ইটালির সমুদ্র সৈকতে পৌঁছেছে এক হাজারের বেশি মানুষ৷ মে মাসের এক তারিখেই ৯৯৭ জন পৌঁছেছে৷

১০ হাজার অভিবাসীর মধ্যে বাংলাদেশি এক হাজার ১৪ জন, তিউনিশার ১ হাজার ৪১২ জন এবং আইভোরি কোস্টের এক হাজার ২৩৭ জন৷

এছাড়া গিনি, মিশর, সুদান, মালি, ইরেত্রিয়া, আলজেরিয়া এবং মরক্কোর নাগরিকও আছেন৷ আছে অন্যান্য দেশের ২ হাজার ৮৯৫ জন, যাদের পরিচয় এখনো অজানা৷

এপ্রিল মাসের ২৬ তারিখের মধ্যে ইটালি পৌঁছেছে ১ হাজার ২৩২ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক৷

কট্টরপন্থি দলের বক্তব্য ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে’

ইটালির কট্টরপন্থি দল ব্রাদার্স অফ ইটালি এফডিআই সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, ‘‘গত চার মাসে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ অবৈধভাবে সমুদ্রপথে এসেছে৷

সরকারের অভিবাসন আইনের কারণে এমন সব দেশের মানুষ ইটালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে, যেখানে কোন সংঘাত নেই৷

যেমন: বাংলাদেশ, আইভরিকোস্ট, তিউনিশিয়া৷

এই অগ্রহণযোগ্য সংখ্যা এটাই নিশ্চিত করে যে, গণ অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে উত্তর আফিকার সাথে নৌপথে যাতায়াত বন্ধের চুক্তি করতে হবে৷ এর মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন এবং সাগরে মৃত্যু বন্ধ করা সম্ভব হবে৷’’

মতামত দিন