বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীর গত ১৮ মাসে জনগণের তথ্য অধিকারের ক্রমাগত লঙ্ঘন ও সংকোচনের নজিরবিহীন প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আর্টিকেল নাইনটিন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশে জনগণের তথ্য অধিকার ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে।
অথচ তথ্য পাওয়া নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার। একইভাবে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তার সমান অধিকারও নাগরিকের রয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে আড়িপাতা এবং গোপন ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে।
আর্টিকেল নাইনটিন ২৮শে সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক তথ্য দিবস উপলক্ষে সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এটাকে নজিরবিহীন প্রবণতা বলে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বলেছে, করোনাকালে সরকার নানা অজুহাত দেখিয়ে জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে।
শুধু তাই নয়, করোনা ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা ও টিকা নিয়ে সরকার অনেক সময় ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করায় সরকার সাংবাদিকদের ওপর খড়গহস্ত হয়েছে। এজন্য ব্যবহার করেছে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
আর্টিকেল নাইনটিন- এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে মহামারির প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে একইরকম সমন্বয়হীনতা, কর্ম পরিকল্পনায় অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার তীব্র অভাব রয়েছে।
যে কারণে সংকট আরও গভীরতর হয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন যন্ত্রের হাতে তথ্যের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সংস্থাটি মনে করে, সরকারের প্রতিশ্রুত টেকসই, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে এটা পরিপন্থি ।
আর্টিকেল নাইনটিন এর পর্যবেক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, দেশে ৫০টি’র বেশি টেলিভিশন চালু রয়েছে।
হাজারের বেশি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানে স্বাধীনভাবে খবর পরিবেশন করা হচ্ছে। সরকার তো কাউকে কোথাও বাধা দিচ্ছে না।
যদি কেউ অন্যের মত প্রকাশে বাধা তৈরি করে, ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করে তখন সরকার প্রচলিত আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়। এটাকে তো মত প্রকাশের বাধা বলা যায় না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এই আইনটি সাধারণ নাগরিকের ডিজিটাল নিরাপত্তার স্বার্থে প্রণীত।
কেউ যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কারও বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে বা ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় তখন এই আইনের মাধ্যমে তিনি প্রতিকার পেতে পারেন।
কাউকে হয়রানি বা কারো মত প্রকাশে বাধা দেয়ার জন্য এই আইনের ব্যবহার হচ্ছে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
আর্টিকেল নাইনটিন সংস্থাটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া ১৭২ টি মামলার ঘটনা রেকর্ড করেছে। এসব মামলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০৮ জন ব্যক্তি অভিযুক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ৪১ জন সাংবাদিক রয়েছেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে ১১৪ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের অনেকেই এখনো জামিনের অপেক্ষায় আছেন।
এছাড়া ২০২০ সালের ৩৬৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৯৭ মামলার তথ্য রেকর্ড করা হয়। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা ছিল কম। এই দুই বছরে মামলা হয় ১০০টি।
আর্টিকেল নাইনটিন-এর তরফে আরও বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে তথ্য অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সংবিধান জনগণের তথ্য অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা দিয়েছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিরও অন্যতম অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের করা এই অঙ্গীকারগুলো প্রতিপালনে সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।