দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র পারমাণবিক চুল্লিপাত্র (রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল-আরএনপিপি) স্থাপন কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এমন আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ এ রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা বলেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ যখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে…ইতোমধ্যে আমরা কিন্তু সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছি।
আমরা আশা করি, ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট হয়ে যাবে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে।’
পারমাণবিক কেন্দ্রের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ছিল বঞ্চিত। এই বঞ্চনার ইতিহাস কিন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ ১৯৬১ সালে যখন সিদ্ধান্ত হলো এখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে তখন পাকিস্তানের সরকার শুধু জমিটায় দিয়েছিল।
‘বাঙালিদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য শুধু জমিটা দেয়া হয়। এর বাইরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষীণ উদ্যোগ নেয়নি। বরং এর পেছনে যে অর্থ বরাদ্দ ছিল তা পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং সেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পারমাণবিক চুল্লিপাত্র বসানো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে।
ওই কেন্দ্রের যে যন্ত্রে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (পারমাণবিক জ্বালানি) ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তার মূল কাঠামো হচ্ছে এই বিশেষ যন্ত্র, পরমাণু চুল্লি)। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হৃদপিণ্ড বলা হয়।
রূপপুর প্রকল্প দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ১২শ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও ১২শ মেগাওয়াট অর্থাৎ মোট ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পারমাণবিক প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক অ্যানার্জি অ্যাসোসিয়েশন (আইএইএ) গাইড লাইন অনুযায়ী এবং সংস্থাটির কড়া নজরদারির মধ্য দিয়েই রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।