ইউক্রেনে আটকা বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলা, নাবিক নিহত

google news

যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় আটকে পড়া বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হয়েছে। এতে বাংলাদেশি এক নাবিক মারা গেছেন।

বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টার দিকে (স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ১০ মিনিট) এ হামলা হয়।

নিহত নাবিক হলেন- জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমানের (৪৭)।

হামলা ও প্রকৌশলীর মৃত্যুর বিষয়ে বাংলার সমৃদ্ধিতে অবস্থান করা নাবিক আতিকুর রহমান মুন্না তার ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, জাহাজে রকেট হামলা হয়েছে। একজন মারা গেছেন।

জাহাজটিতে বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিলেন। হামলায় একজনের মৃত্যু হলেও বাকিরা নিরাপদে আছেন। ইউক্রেনে যুদ্ধরত কোন পক্ষ জাহাজটিতে হামলা চালিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইউক্রেইনের সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষের বরাতে একটি ফেইসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, একটি রকেট আঘাত হানার পর ৩৬৩ নম্বর অ্যাঙ্করেজে থাকা বাংলার সমৃদ্ধিতে আগুন ধরে যায়।

পরে বন্দর থেকে দুটি টাগবোট পাঠানো হয় সেখানে।

বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হুসাইন নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাজিদ।

সেখানে তিনি লেখেন, ‘কিছুক্ষণ আগে বাংলাদেশ সময় (২ মার্চ ২০২২) রাত প্রায় ৯:২৫-এ জাহাজের ব্রিজে রকেট হামলা হয়েছে। একজন বাদে বাকি সবাই অক্ষত। সবাই আল্লাহর কাছে ওদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করি।‘

বাংলাদেশের পতাকাবাহী ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিএসসির জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর আগে ইউক্রেইনের অলভিয়া বন্দরে গিয়েছিল।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি অলভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধ শুরু হলে সাধারণ পণ্যবাহী (বাল্ক ক্যারিয়ার) জাহাজটি ওই বন্দরে আটকা পড়ে।

দেশে ফেরার আকুতি

ইউক্রেনের বন্দরে আটকে পড়া বাংলার সমৃদ্ধির একজন নাবিকের সঙ্গে বিবিসি বাংলার কথা হয় দুদিন আগে। তখন তিনি দেশে ফেরার তীব্র আকুতির কথা জানিয়েছিলেন। আতিকুর রহমান মুন্না বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৯ জন নাবিকের একজন।

বিবিসি বাংলার শাহনেওয়াজ রকির সঙ্গে তার কথা হয় ফেসবুকের ফ্রি মেসেঞ্জার সার্ভিসের মাধ্যমে।

কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করতে জানালেন, দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ তিনি জানেন না কবে এই আটকে পড়া দশা থেকে মুক্তি পাবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত থাকায় বহির্বিশ্বের খবর খুব একটা পাচ্ছেন না। যুদ্ধের বিস্তারিত খুব কমই জানতে পারছেন।

তবে আশপাশে যুদ্ধবিমান উড়তে দেখেছেন তিনি। যেদিন যুদ্ধ বেধেছে প্রথম, সেদিন আকাশ থেকে বোমা ফেলতে দেখেছেন। যে বন্দরে আটকা পড়েছেন তারা, সেই অলভিয়ার আশপাশে রবিবার তারা অনেক বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন।

এসব কারণে তাদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে মাঝে মাঝে বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন মি. রহমান।

তিনি জানান, শিপিং কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও ক্যাপ্টেনের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে , কিন্তু কীভাবে এই অবস্থা থেকে মুক্ত হবেন তা এখনও জানেন না।

বিবিসির শাহনেওয়াজ রকিকে মি. রহমান আরো বলেন, জাহাজে যে খাবার মজুদ আছে তা দিয়ে সব ক্রুর ৪০ দিন পর্যন্ত টিকে থাকা সম্ভব হবে, খাবার পানি আছে প্রায় ১০০ টনের বেশি, তাই আপাতত খাবার ও পানি নিয়ে চিন্তা করছেন না। যত দুশ্চিন্তা দেশে ফিরতে পারবেন তো?

সীমিত ইন্টারনেট সংযোগের কারণে তার সঙ্গে খুব বেশি আলাপ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বিদায়ের আগে তিনি আকুতি জানান, “দেশে ফিরতে চাই”।

মতামত দিন