বাস্তুচ্যুতদের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে: জাতিসংঘ

google news

করোনা মহামারিসহ যুদ্ধ, নিপীড়ন, সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে এক বছরের ব্যবধানে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২৯ লাখ বেড়েছে।

শুক্রবার প্রকাশিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশন ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর)-এর বার্ষিক গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্টে এ কথা বলা হয়৷ খবর ইনফোমাইগ্রেন্টস

প্রতিবেদনের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ২৪ লাখ৷ এ সংখ্যা ২০১৯ সালে ছিল ছিল ৭ কোটি ৯৫ লাখ। সে হিসেবে এক বছরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা শতকরা চার ভাগ বেড়েছে৷

বাস্তুচ্যুত এসকল মানুষের অধিকাংশই সংঘাত চলছে এমন দেশের প্রতিবেশি দেশের মানুষ এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে রয়েছেন৷

রিফিউজি ও ভেনেজুয়েলা থেকে বাস্তুচ্যুতদের ৮৬ ভাগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আশ্রয়গ্রহণ করেছে৷ আর অনুন্নত দেশগুলোতে রয়েছে ২৭ ভাগ৷

প্রতিটি সংখ্যার পেছনে একজন মানুষ

গত বছর পর্যন্ত ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে ছিল দুই কোটি বিশ সাত লাখ শরণার্থী৷ ফিলিস্তিনি শরণার্থী ৫৭ লাখ আর ৩৯ লাখ ছিল ভেনিজুয়েলা থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ৷

এ সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় বেশি বলে জানায় জাতিসংঘ৷ তাছাড়া চার কোটি আশি লাখ মানুষ নিজ দেশেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে৷ আর ৪১ লাখ ছিল আশ্রয়প্রার্থী৷

ইউএনএইচসিআরের ফিলিপ্পো গ্রান্দি বলেন, ‘‘প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে একজন মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার কাহিনী৷’’ তাদের সবারই সহযোগিতা দরকার৷ শুধু মানবিক সহযোগিতাই নয়, তাদের প্রয়োজন এমন অবস্থা পরিবর্তনের সমাধানের সহযোগিতা, বলেন তিনি৷

শরণার্থী শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

প্রতিবেদনে বাস্তুচ্যুতের ঘটনায় শিশুদের বেশি ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে৷

জাতিসংঘ বলছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে দশ লাখ শিশু শরণার্থী হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছে৷

তাছাড়া বাস্তুচ্যুতের শতকরা ৪২ ভাগ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে৷ তাদের অধিকাংশেরই দীর্ঘদিন শরণার্থী হয়ে থাকার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ক্রিস মেলসের ডয়চে ভেলেকে বলেন, অধিকাংশ সময়ই শরণার্থী শিশুদের নূন্যতম শিক্ষা দেওয়ার বেশি কিছু করার অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকে না৷

‘‘অনেক শরণার্থী বিশেষ করে বাবা-মায়েরা আমাকে বলেছে যে, “আমাদের বিষয়টি ভুলে যান কারণ আমরা হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম৷ কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু করুন৷ শিক্ষার সুযোগ পেতে তাদের সহযোগিতা করুন৷ তাদের একটি সুযোগ দিন৷” তবে আমরা মা-বাবাদের এ প্রজন্মকেও বঞ্চিত করতে চাই না৷’’

জার্মানিতে কমেছে শরণার্থীর আসার সংখ্যা

এদিকে টানা চতুর্থ বছরের মতো জার্মানিতে শরণার্থী আসার সংখ্যা কমেছে৷ গত বছর দেশটিতে এক লাখ দুই হাজার ছয়শ আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে৷ বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ শরণার্থী রয়েছে ইউরোপের এ দেশটিতে৷

জার্মানিতে মোট শরণার্থীর সংখ্যা ১৫ লাখ৷ ৩৭ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে তুরস্ক রয়েছে সবার উপরে৷ আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কলম্বিয়া যেখানে মোট শরণার্থীর সংখ্যা ১৭ লাখ৷

ইউএনএইচসিআরের জার্মান প্রতিনিধি কাথারিন লুম্পা বলেন, সারা বিশ্বজুড়ে পরিস্থিতি যখন নাটকীয়ভাবে মোড় নিচ্ছে, জার্মানি ও ইউরোপে টানা চার বছর ধরে শরণার্থীর আগমনের সংখ্যা কমছে৷

এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপ আশ্রয়প্রার্থীদের বিভিন্ন দেশে সমানভাবে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ধারণা তৈরি করতে পারে, বলেন তিনি৷

মতামত দিন