সারাদেশে পোল্ট্রি ও মৎস্য প্রজেক্টের খাদ্য তৈরীর কারখানায় ব্যবহার হচ্ছে মাছের ফেলনায় মূল্যবান তেল।
মৎস্য প্রজেক্ট, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরন, কারখানা ও বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহিত মাছের আঁউশ, চর্বি, ফুলকা, পাখনা, অপরাপর দেহাবশেষ ও ফেলনা আইটেম সংগ্রহ করে তৈরী করা হচ্ছে এই মূল্যবান তেল।
স্থানীয় উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গড়ে উঠা এ শিল্পের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হয়ে আসছে।
উদ্যোক্তারা জানান, দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ কর্তৃক স্থাপিত ফিস ফিড ও পোল্ট্রি ফিড মিলে উৎপাদনের সময় বিভিন্ন মাছের তেল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মাছের প্রজেক্টের ভাসমান খাদ্য তৈরীর ক্ষেত্রে এই তেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
এ তেল ছাড়া কোনো ভাসমান খাদ্য তৈরী করা এখনও সম্ভব হয়নি। এতোদিন এসব তেল আমদানী করে দেশের চাহিদা মেটানো হতো। এতে বৈদেশিক মুদ্রাও অপচয় হয়ে আসছিল।
কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মূল্যবান তেল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তাই উদ্যোক্তারা এ উৎপাদনকে আরও সমৃদ্ধি ও গতিশীল করতে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাজার, কাওরান বাজার, মহাখালি বাজার, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় আড়তে যে মাছগুলো কাটা হয় তার ফেলনা সংগ্রহ করে এসব তেল তৈরী করা হয়।
বিশেষ করে মাছ ও মাছের চর্বি বিশেষ নানা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই তেল বের করা হয়। এসব তেলের চাহিদা বেশী হওয়ায় সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করে এনে পানি ও গাঁদ বাদ দেওয়ার পর আরও মানোন্নত করে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এই তেলের সবচেয়ে বড় অংশ চলে যায় দেশের বিভিন্ন ফিড মিলে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তেলে চাহিদা পুরন না হওয়ায় প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন তেল বিদেশ থেকে আমদানি করে ফিডমিল মালিকরা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে এ শিল্প প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি সরকার পাচ্ছে বিশাল অংকের রাজস্ব। কিন্তু এ শিল্পকে প্রতিষ্ঠা করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা পদে পদে হয়রানীর শিকারও হচ্ছে।
এদিকে এজি ওশান ফুড প্রোডাক্টস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আলমগীর জানান, বর্তমানে সারাদেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে তেল উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে দেশের বিভিন্ন ফিড মিলগুলোতে ওই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে।
যদি আরও পর্যাপ্ত কাঁচামাল ও সরকারের আন্তরিকতা সহযোগিতা থাকে তাহলে এ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে বলে তারা বিশ্বাস করে।
কক্সবাজার ফিশারী পাড়ার এক উদ্যোক্তা জানান, গত অর্থ বছরে মোট ১৪ লাখ টাকা সরকারকে রাজস্ব দিয়েছেন। পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্সধারী এসব প্রতিষ্ঠান সরকারীভাবে নিবন্ধন লাভের জন্য বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরে যাবতীয় কাগজপত্রসহ নানা শর্তাবলী মেনে আবেদন করেছেন।
কিন্তু সরকারের নানান প্রক্রিয়াগত কারনে এ শিল্প এখনও নিবন্ধন পর্যায়ে আসতে পারেনি। যদি উদ্যোক্তারা সরকারী পৃষ্টপোষকতা পায় তাহলে এ শিল্পকে আরও বহুদুর এগিয়ে নিয়ে যাবে, এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।