আগে পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় পাঠাতে আয়ের নথিপত্র জমা দিতে হতো। এখন থেকে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই পাওয়া যাবে প্রণোদনা।
দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশ থেকে অবাধে টাকা আনতে বাধা নেই।
এ নিয়ে বিদেশেও কেউ প্রশ্ন করবে না, দেশেও কোনো প্রশ্ন করবে না এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নেওয়া পদক্ষেপ হিসেবে পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার বা তার বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠালে প্রণোদনা পাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক নথি জমা দেওয়ার বিধান প্রত্যাহার করেছে।
সোমবার (২৩ মে) ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপার্টমেন্টের জেনারেল ম্যানেজার কাজী রফিকুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে অনির্দিষ্টকালের জন্য নথি জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করেছে।
ফলে রেমিট্যান্স প্রেরকরা বিদেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংস্থাগুলোতে নথি জমা না দিয়ে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রেরিত যে কোনও পরিমাণ রেমিট্যান্সের জন্য ২.৫% তাৎক্ষণিক প্রণোদনা পাবেন।
সোমবার থেকে সব তফসিলি ব্যাংককে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।
গত ২০২১ অর্থবছরে, বাংলাদেশ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যা এখন পর্যন্ত এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এই খাতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বলেছেন, মহামারির পর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরে হুন্ডি এবং অন্যান্য অবৈধ চ্যানেলগুলো সক্রিয় হওয়ায় অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে।
সরকার বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করছে।
কারণ আমদানির অর্থ পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে।
বাংলাদেশে যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, এলপিজি-জ্বালানি তেল এবং অন্যান্য পণ্যের আমদানি ক্রমবর্ধমানহারে বাড়ছে।
এছাড়াও, মহামারির অবস্থা খুব খারাপ থাকার সময় করা এলসিগুলোর বিলম্বিত পেমেন্ট এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে চলতি অর্থবছর ২০২১-২২ এর প্রথম ৯ মাসে ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে।
টাকার মান আরও কমল
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম আরও এক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে।
গতকাল সোমবার দর ৪০ পয়সা বাড়িয়ে দেওয়ায় এখন সরকারি হিসাবে ১ ডলার কিনতে লাগবে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা।
তবে ব্যাংকগুলোয় ডলারের দাম এখনো ৯৫ টাকার বেশি। এই দামে প্রবাসী আয় আনছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে।
আর এর চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকদের থেকে দায় মেটাতে বিল আদায় করছে।
এর আগে গত ১৬ মে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো হয় ৮০ পয়সা।
তখন ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
আবার গত ৯ মে ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
এরও আগে জানুয়ারি মাসের শুরুতে ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা, ২৩ মার্চ ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছিল।
আর গত ২৭ এপ্রিল ২৫ পয়সা বাড়িয়ে করা হয় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা।
ডলারের মান বাড়ানোর অর্থই হচ্ছে এতে রপ্তানিকারকেরা লাভবান হন।
প্রবাসীরাও রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বেশি অর্থ পান। তবে এতে দাম বেড়ে যায় আমদানি পণ্যের। ফলে দেশে মূল্যস্ফীতিও আমদানি হচ্ছে।