প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল রীতিমতো বিস্ময় তৈরি করলেন। এমনিতে তিনি বেশ স্মার্ট মানুষ। শীর্ষ আমলা হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল। কথা বলেন গুছিয়ে। মিডিয়াও তার বক্তব্য লুফে নেয়।
শিরোনাম হন বারবার। দায়িত্ব নেয়ার পর শুরুতেই তিনি দৃশ্যত বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির মতো মাঠে থাকার।
গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাচ্ছি, মাঠ ছেড়ে চলে আসলে হবে না। মাঠে থাকবেন, কষ্ট হবে। এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়তো দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতেন।
কিন্তু উনি পালাননি। তিনি বলছেন আমি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করবো। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধ করে যাচ্ছেন।’ সিইসি’র এই বক্তব্য তখন কূটনৈতিক পাড়ায় চাপানউতোর তৈরি করে।
ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাস এই বক্তব্য ভালোভাবে নেয়নি। রুশ দূতাবাস কূটনীতিক চ্যানেলে অসন্তোষও জানিয়েছিল।
তবে গতকাল রোববার সিইসি যা বলেছেন তাতে উৎকণ্ঠা বোধ না করা বেশ কঠিন।
এ দিন সকালে এনডিএমের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকেও কিন্তু রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কি করবো? কাজেই আমরা সাহায্য করবো। পুলিশের ওপর, সরকারের ওপর আমাদের কমান্ড থাকবে।” সূত্র: বিডিনিউজ
বিকালেই অবশ্য অন্য সুর শোনা যায় কাজী হাবিবুল আউয়ালের কণ্ঠে।
এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচন এক ধরনের যুদ্ধ। অনেকেই বলছেন, আসেন যুদ্ধের মাঠে আসেন। সেখানে আসলে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলে হবে না।
আপনাদের জনসমর্থন নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। আপনারা তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করবেন না।
আপনাদের জনসমর্থন যেগুলো আছে তারা আসবে। আপনারা ব্যালট নিয়ে যুদ্ধ করবেন। সেই যুদ্ধটা আপনাদের করতে হবে।’ সূত্র: ঢাকা পোস্ট
গণতন্ত্র নিয়ে দেশে দেশে অনেক কৌতুক হয়েছে, হচ্ছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক পণ্ডিত বলছেন, গণতন্ত্র মধ্যবয়সের সংকটে আক্রান্ত।
কিন্তু গণতন্ত্রে সহিংসতার স্থান আছে এ কথা এখন পর্যন্ত কেউই বলেননি। বরং গণতন্ত্র সহিংসতাকে ঘৃণা করে। ভোটই গণতন্ত্রের একমাত্র কথা নয়। গণতন্ত্র একটি ভাবাদর্শ।
যেখানে বহুকিছু আছে। কিন্তু ভোটই গণতন্ত্রের প্রধান কথা। ভোট ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। এটি একটি চুক্তিও বটে। যার মাধ্যমে বিবদমান গোষ্ঠীগুলো শান্তিপূর্ণ পথে নিজেদের বিবাদের মীমাংসা করে। একে অন্যের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। গণতন্ত্র অস্ত্র ও তলোয়ারের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না।
বরং গণতন্ত্র ঘোষণা করে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
আমাদের সংবিধানও এ ঘোষণা দেয়। এবং এর মাধ্যমে গণতন্ত্র ও সংবিধান অস্ত্র, বন্দুক, তলোয়ার সবার ক্ষমতা রহিত ঘোষণা করে।
শুধু সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালই নন অনেক রাজনীতিবিদ বা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিও মাঝে মধ্যে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার কথা বলেন।
কেউ কেউ বলেন, অমুক প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না, অমুকে মাঠে ছিল না- তাই অবাধ ভোট হয়নি। কিন্তু একটি আদর্শ গণতন্ত্রে এসব কথা অচল। গণতন্ত্রে জনগণকে প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দিতে হবে।
দুইজন প্রার্থী থাকলেও ভোট হবে। কে কেন্দ্রে থাকবে, কে থাকবে না- তা কোনো বিষয় নয়।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব কি?
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। যেখানে মানুষ ভয়ভীতিহীন পরিবেশে গিয়ে ভোট দিতে পারবে। অমুক মাঠে থাকবেন, তমুক লড়াই করবেন- এসব নসিহতের দায়িত্ব সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে দেয়নি।