আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় হামলায় নিহত হয়েছেন আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি।
স্থানীয় সময় সোমবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক ঘোষণায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
জাওয়াহিরিকে হত্যা
রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালিত এক ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন।
এর আগে জো বাইডেন জানান, ৭১ বছর বয়সী জাওয়াহিরিকে হত্যার জন্য হামলা চালাতে তিনি অনুমোদন দিয়েছিলেন।
এজন্য কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, রবিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)-এর তরফে এই ড্রোন হামলা চালানো হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন ড্রোন থেকে যখন দুইটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় তখন জাওয়াহিরি একটি সেফ হাউজের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন।
ওই সময়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও বাড়িটিতে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাদের কোনও ক্ষতি হয়নি।
জো বাইডেন যা বলেন
আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহতের ঘটনায় জো বাইডেন বলেন, জাওয়াহিরির বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকদের হত্যা ও সহিংসতার প্রমাণ রয়েছে।
এখন ন্যায়বিচার হয়েছে এবং এই সন্ত্রাসী নেতা আর বেঁচে নেই। এর জন্য কতদিন সময় লেগেছে সেটা বড় বিষয় নয়।
I’m addressing the nation on a successful counterterrorism operation. https://t.co/SgTVaszA3s
— President Biden (@POTUS) August 1, 2022
কোথায় লুকিয়ে ছিল সেটাও কোনও ব্যাপার নয়। তুমি যদি আমেরিকার জনগণের জন্য হুমকি হও, তাহলে আমেরিকা তোমাকে খুঁজে বের করবে।
তালেবানে জানিয়েছে, হামলা আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন
তালেবানের পক্ষ থেকেও রবিবার দেশটিতে মার্কিন ড্রোন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তালেবানের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কাবুলের একটি আবাসিক এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বিস্ফোরণ ছাড়া জাওয়াহিরিকে কীভাবে হত্যা করল যুক্তরাষ্ট্র

আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি কাবুলে তার বাড়িতে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তিনি নিহত হয়েছেন।
অথচ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি এবং সেখানকার ছবিগুলোতে বিস্ফোরণের কোনো চিহ্নও দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও বলছেন, ড্রোন হামলায় জাওয়াহিরি ছাড়া আর কেউই আহত বা নিহত হননি। এমন কি তার পরিবারের সদস্যরাও অক্ষত রয়েছেন। শুধু একটি জানালা ভেঙে গেছে। বাড়িটির বাকি সব জানালাও অক্ষত রয়েছে।
পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলার সময় জাওয়াহিরি বারান্দায় একাই হাঁটছিলেন। শুধু তিনিই নিহত হয়েছেন।
তাহলে এমন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কীভাবে সম্ভব!
জাওয়াহিরির ওপর হামলা ইঙ্গিত করছে যে যুক্তরাষ্ট্র তাকে হত্যা করতে ম্যাকাব্রে হেলফায়ার আর৯এক্স ব্যবহার করেছে।
ধারণা করা হয় এটি এমন এক ওয়ারহেড যেখানে লাগানো থাকে ছয়টি ধারালো ব্লেড, যার আঘাতে বিস্ফোরণ হয় না, কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়িয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করতে পেন্টাগন ও সিআইএর প্রিয় অস্ত্র হয়ে উঠেছে হেল ফায়ার।
২০১৭ সালে আল কায়েদার সিনিয়র নেতা আবু আল-খায়ের আল-মাসরি সিরিয়ায় গাড়িতে অবস্থান করার সময় একই রকম ড্রোন হামলায় নিহত হন।
সে সময়ের ছবিগুলোতে গাড়ির ছাদে একটি বড় গর্ত দেখা যায় এবং এর অভ্যন্তরীণ সব কিছু এবং ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা মুহূর্তেই টুকরা টুকরা হয়ে যায়। কিন্তু গাড়ির সামনে ও পেছনে অক্ষত থাকে।
গাড়ির ছবিগুলিতে গাড়ির ধাতুসহ ছাদ দিয়ে একটি বড় গর্ত দেখা গেছে এবং এর অভ্যন্তরীণ সব অংশ, যার মধ্যে থাকা ব্যক্তিরা শারীরিকভাবে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে৷ কিন্তু গাড়ির সামনে ও পেছনে সম্পূর্ণ অক্ষত দেখা গেছে।
কে এই আয়মান আল জাওয়াহিরি
১৯৫০ সালে মিসরের এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। জঙ্গিবাদী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার আগে তিনি মূলত একজন সার্জন ছিলেন।
বারবার কারাবরণ ও নিপীড়নের মুখে এক পর্যায়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে মুজাহিদিন যোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। পরিচয় হয় সৌদি পৃষ্ঠপোষক ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে।
উভয়ে মিলে গড়ে তোলেন আল কায়েদা।
২০১১ সালে পাকিস্তানে এক অভিযানে লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন জাওয়াহিরি। তাকে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে যুক্তরাষ্ট্রে চালানো হামলার মূল রূপকার বলে মনে করেন অনেকে।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ২২ “মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী” তালিকায় দুই নম্বরে তার নাম ছিল। এক নম্বরে ছিল ওসামা বিন লাদেনের নাম। সে সময় জাওয়াহিরির মাথার জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
ওসামা বিন লাদেনের ডান হাত
দুই হাজার এগার সালে পাকিস্তানে আমেরিকার এক অভিযানে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর আয়মান আল-জাওয়াহিরি আল-কায়েদার নেতৃত্ব নেন।
আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন এবং আল-জাওয়াহিরি এক সাথে আমেরিকার ওপর যুদ্ধ ঘোষণা করেন, এবং ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের আক্রমণের আয়োজন করেন। বলে অভিহিত করেন।
আল-জাওয়াহিরি মিশরের ইসলামি জিহাদ নামক জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালের মে মাসে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হবার পর আল-জাওয়াহিরি আল-কায়েদার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
তার আগে আল-জাওয়াহিরিকে ওসামা বিন লাদেনের ডান হাত আর আল-কায়েদার মূল চিন্তাবিদ বলে গণ্য করা হত।
অনেকে মনে করেন আয়মান আল-জাওয়াহিরিই ছিলেন ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকায় হামলার মূল রূপকার।