উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের গুলি করে দুই রোহিঙ্গা নেতাকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা।
নিহতরা হলেন, ক্যাম্প ১৫ এর সি ব্লকের হেড মাঝি আবু তালেব ও সি/৯ সাব ব্লকের মাঝি সৈয়দ হোসেন।তাদের মধ্যে একজন ব্লকের হেড মাঝি ও আরেকজন সাব ব্লকের মাঝি।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ক্যাম্প ১৫ এর সি-৯ ব্লকের দুর্গম পাহাড়ের ঢালে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় রোহিঙ্গা সূত্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত দুজন রাতে ক্যাম্প এলাকার পাহাড়ি অংশে উঠেছিলো এবং সেখানেই তাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যা বলেন
খুনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ৮-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কর্মকর্তা মো. কামরান হোসেন বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক পেতে কেউ কেউ পাহাড়ে ওঠেন বিভিন্ন সময়ে এবং যতটুকু জানা যাচ্ছে নিহত দুজন মোবাইল নিয়ে সেখানে উঠেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটের দিকে ক্যাম্প-১৫ এর সি-৯ ব্লকের সমতল হতে অনুমান ১৫০ ফিট ওপরে দুর্গম পাহাড়ের ঢালে জনৈক আছিয়া বেগমের শেড নং-১০১০ এর সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে সি ব্লকের হেড মাঝি আবু তালেব এবং সি/৯ সাব ব্লকের মাঝি সৈয়দ হোসেন গুরুতর আহত হয়ে জামতলী এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি হয়।
পরে সৈয়দ হোসেনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন এবং আবু তালেবের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুতুপালং হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
পরবর্তীতে কুতুপালং এমএসএফ হসপিটালে পৌঁছলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন।
কামরান হোসেন আরও জানান, প্রাথমিকভাবে জানা যায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে ৮ থেকে ১০ জন দুষ্কৃতকারী পূর্বপরিকল্পিতভাবে সৈয়দ হোসেন এবং আবু তালেবকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
ক্যাম্পে ব্লক রেইড এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উখিয়া থানায় মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান এপিবিএন কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই মাঝি নিহতের ঘটনায় দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করতে ক্যাম্পে ব্লকরেইড দিয়ে অভিযান চলছে বলে জানান, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরান হোসেন।
হামলার ঘটনা প্রায়শই ঘটে
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আধিপত্য নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা কিংবা পাল্টা হামলার ঘটনা প্রায়শই ঘটে।
এর আগে গত জুন মাসেও মধুরছড়া এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোহাম্মদ শাহ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিলো। পুলিশ বলেছিলো অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা নিজের ঘরের সামনেই গুলি করেছিলো তাকে। পরে তিনি মারা যান।
এছাড়া গত নভেম্বরে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় দুজন রোহিঙ্গা। যাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ এনেছিলো র্যাব।
তবে গত বছর অক্টোবরে রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যার পর রোহিঙ্গাদের মধ্যকার বিরোধের বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই সামনে চলে আসে।
বাংলাদেশে সব মিলিয়ে এগারো লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের অনেকেই অনিবন্ধিত আশ্রয় শিবিরগুলোয় বসবাস করে।
আরও পড়ুন…
- নানা অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা, বাড়াচ্ছে এইডসের ঝুঁকি!
- মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ, রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা চলবে
- রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন নিয়ে আশঙ্কায় ইউএনএইচসিআর
- বন্ধ হলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে বড় স্কুল
- মিয়ানমারের চালাকি, রোহিঙ্গা তালিকায় শুভঙ্করের ফাঁকি
- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নামে মিয়ানমারের নতুন ফাঁদ?