জাতিসংঘ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ব্যাশেলেতের বক্তব্য নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে

google news

জাতিসংঘবাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মিশেল ব্যাশেলেত উদ্বেগ প্রকাশ না করার বিষয়ে সরকারের দুই মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে সম্পর্কে অবস্থান প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ ক্ষেত্রে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর কথা তুলে ধরে ব্যাশেলেত কোন প্রেক্ষাপটে কী বক্তব্য দিয়েছেন তার উল্লেখ করেছে।

ব্যাশেলেতের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার: জাতিসংঘ

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভুল তথ্যের (মিস-ইনফরমেশন) বিষয়ে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাইকমিশনার সরকার, নাগরিক সমাজ ও অন্যদের সঙ্গে সংলাপে এবং তার ঢাকা সফরের বিবৃতিতে মানবাধিকারের বিস্তৃত ক্ষেত্রে তার উদ্বেগের জায়গাগুলো নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন।

সফরের শেষ দিন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

হাইকমিশনারের সফরে বিভিন্ন বৈঠকে মানবাধিকার পরিস্থিতির পাশাপাশি গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়টি উঠে আসে বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রীরা।

সংবাদ সম্মেলনে মিশেল ব্যাশেলেতের বক্তব্যের বড় অংশজুড়েও ছিল এসব বিষয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের কেন্দ্রও ছিল গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের অবস্থান ঘিরে।

স্বাধীন ও বিশেষায়িত নতুন একটি সংস্থার মাধ্যমে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানান চিলির সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

মিশেল ব্যাচেলেট ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটিসহ সংস্থার বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে কয়েক বছর ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।

‘এসব অভিযোগের অনেকগুলোই বর্তায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর এবং এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাবের অভিযোগ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে এসব গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি এবং এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছি।’

ঢাকা সফর শেষে ফিরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর ২৫ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার হিসাবে জেনেভায় শেষ সংবাদ সম্মেলন করেন মিশেল ব্যাচেলেট।

তবে ওই সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মোটাদাগে আলোচনা করলেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলেননি তিনি।

ওই সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে করা প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতিসংঘের দৃষ্টিতে মানবাধিকার বা অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো উদ্বেগ প্রকাশিত হয়নি।’

বারবার এ নিয়ে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে আসছি যে বিএনপি একটি অবস্থা সৃষ্টির জন্য বিভিন্নভাবে রটনা করে যাচ্ছে। যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং তারা এর সত্যতা দেখাতে পারেনি।

‘ভিত্তি না থাকার কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার আমাদের দেশের মানবাধিকার নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি।’

জেনেভায় গিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ না করার বিষয়ে এক প্রশ্নে রোববার আইনমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার সংগঠন ও অন্যান্য বিষয়ে যেসব সংগঠন আছে, যারা বলে যে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তারাও জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন।

‘সবকিছু দেখে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। সে ক্ষেত্রে আমরা বুঝতে পারি যে মন্তব্যটি অত্যন্ত ডিপ রুটেড এবং ওয়েল আন্ডারস্টুড।’

জেনেভায় দেয়া বক্তব্য কোনোভাবেই ‘বৈশ্বিক রিপোর্ট’ নয় উল্লেখ করে মঙ্গলবারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যেহেতু হাইকমিশনার বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়টি ইতোমধ্যে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন, সেহেতু ২৫ আগস্ট জেনেভায় তার মেয়াদ শেষের বক্তব্যে জোর দিয়েছেন বৈশ্বিক ইস্যুগুলোর ওপর, যা বাংলাদেশসহ সব দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

‘পাশাপাশি পাঁচ বছর পূর্তির ওই দিনে রোহিঙ্গা সংকটের ওপরও তিনি আলোকপাত করেছেন। এটাকে বৈশ্বিক রিপোর্ট হিসেবে ধরার কথা ছিল না।’

ঢাকায় হাইকমিশনারের দেয়া একটি বক্তব্য মঙ্গলবারের বিবৃতিতে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘যেভাবে হাইকমিশনার ঢাকায় তার বিবৃতিতে বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জকে স্বীকার করাই হচ্ছে সেটাকে উত্তরণের প্রথম পদক্ষেপ’ এবং হাইকমিশনারের সুপারিশ অনুযায়ী সহযোগিতার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় কাজ করতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় প্রস্তুত রয়েছে।’

ব্যাশেলেতের আহ্বান মানতে বলছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে গুমের অভিযোগগুলো গভীরভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।

মঙ্গলবার সকালে দূতাবাসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে এই আহ্বান জানানো হয়।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগগুলো নিয়ে যে গভীর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন তা পুনর্ব্যক্ত করছে দূতাবাস।

ওই পোস্টের সঙ্গে মিশেল ব্যাচেলেটের বক্তব্যের লিংক যুক্ত করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। বাংলাদেশ সফর শেষে ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যাচেলেট।

এতে তিনি বলেছিলেন, গত কয়েক বছর ধরে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা গুম নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছিল। ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ নিয়ে তার গভীর উদ্বেগের কথা তিনি জানিয়েছেন।

ব্যাচেলেট সরকারকে একটি স্বাধীন এবং বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলেছেন, যাতে করে এ ধরনের ঘটনার শিকার ব্যক্তি, পরিবার এবং সিভিল সোসাইটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করা যায়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে এ রকম একটি সংস্থা গড়ে তুলতে তার দফতর বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

বিভিন্ন কারণে মানুষ নিখোঁজ হতে পারে: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

‘বিশ্বের কোনো দেশই পরিপূর্ণ নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার সব নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার ও অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘের তালিকায় থাকা ৭৬ জনের মধ্যে ১০ জনের খোঁজ পেয়েছি।

হয়তো বাকি ৬৬ জনের সবাইকে খুঁজে নাও পেতে পারি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগের নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সুপারিশের প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার আলম আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এসব অভিযোগের সরকারি তদন্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হবে কি না, জানতে চাইলে তদন্ত এমনই হবে বলে দাবি করেন শাহরিয়ার আলম।

‘বিভাগীয় তদন্ত স্বাধীন না হলে বিভিন্ন অপরাধে ৪০০ এর বেশি র‌্যাব সদস্য ও ১ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হলো কীভাবে’, প্রশ্ন করেন তিনি।

তার দাবি, এই সরকারের আমলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীন করা হয়েছে এবং কমিশন তদন্তও করতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ নিখোঁজ ৭৬ জনের একটি তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে সরকার ১০ জনকে খুঁজে বের করে জাতিসংঘে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে। বাকি ৬৬ জনের মধ্যে অন্তত ২৮ জন অপরাধী।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে মানুষ নিখোঁজ হতে পারে। কুখ্যাত অপরাধীরা সাধারণত বিচার প্রক্রিয়া এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়, তবে সরকার এ বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের সফরকালীন সময়ে তার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন, তারা আসলে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক প্লাটফর্মকে (বিএনপি-জামায়াত) সহায়তা করছেন।

এটি সরকারকে অপমান করার একটি অশুভ প্রচেষ্টা।’

তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াত তাদের লোকজন নিয়ে দেশে-বিদেশে ক্রমাগত ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।

কিছু মানুষ জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের আলোচনার বাইরে গিয়ে কিছু বিষয় উত্থাপন করায় প্রতিমন্ত্রী তার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, জাতিসংঘের কার্যপ্রণালী কিভাবে চলে সে সম্পর্কেও তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই।

শাহরিয়ার বলেন, সুশীল সমাজের একটি অংশের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ব্যাচেলেট স্পষ্ট করে বলেছেন যে বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কিত দাবিগুলো সমাধান করা তার আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ ও ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ৯টি মানবাধিকার কনভেনশনের মধ্যে ৮টি অনুমোদন করেছে, যা জনগণের প্রতি দলের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’

জাতিসংঘকে গুম নিয়ে তদন্তে সাহায্যের অনুমতি দিতে বাংলাদেশের প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আহবান

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিৎ জোরপূর্বক গুমের অভিযোগগুলোর স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আন্তর্জাতিক আহবানে সাড়া দেয়া।

৩০শে আগস্ট বিশ্ব গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।

তিনি সরকারের প্রতি গুমের ভিক্টিম, তাদের পরিবার এবং সুশীল সমাজকে সঙ্গে নিয়ে একটি বিশেষ মেকানিজম বা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার আহবান জানান, যার মাধ্যমে দেশের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগগুলো তদন্ত করা যাবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ওই মেকানিজম বাস্তবায়নে তিনি জাতিসংঘের সহযোগিতার প্রস্তাবও দেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের নির্যাতন বন্ধ করতে বাংলাদেশের কৌশলগত এবং বাণিজ্য সহযোগীরা সরকারের প্রতি এরইমধ্যে আহবান জানিয়েছে।

এ নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, অসংখ্য গুমের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের যুক্ত থাকার যে প্রমাণ রয়েছে তা বেশ শক্ত।

বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ এ নিয়ে তাদের অজ্ঞতা জাহির বন্ধ করা এবং অভিযুক্তদের জবাব ও দায় নিশ্চিতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করা।

২০২১ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে গুম নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে এ ধরণের ৮৬টি ঘটনা তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ সরকার ওই রিপোর্ট অস্বীকার করা ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এছাড়া হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে কোনো ধরণের আপডেট তথ্যও দেয়নি বাংলাদেশ সরকার।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের ওই রিপোর্টে বলে, ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব ও এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

কিন্তু এরপর বাংলাদেশ সরকার ভিক্টিমদের পরিবারকে হুমকি ও ভয় দেখাতে থাকে। যদিও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সত্যিকার অর্থে সেখানে দাবিগুলো যাচাই করে দেখছিল।

মায়ের ডাক নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ অন্তত ১০টি পরিবারকে হুমকি দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে তাদের থেকে জোরপূর্বক মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

এতে তারা দাবি করেছেন, তাদের কোনো স্বজন গুম হয়নি এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য কিংবা বর্তমান অবস্থা জানতে কোনো বড় উন্নয়ন না দেখে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু এর পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ র‍্যাব কর্মকর্তাদের ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে গভীর তদন্ত এবং অপরাধের দায় থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে।

মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানান যাতে, গুম নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে করে এ ইস্যু চিহ্নিত করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যাবে।

তিনি বাংলাদেশকে গুম প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বীকৃতি দেয়ার কথাও বলেন।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বছরের পর বছর ধরে কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে, তাদের প্রিয়জনের হদিস সম্পর্কে তাদের জানানো হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ অপরাধীদের দায় নিশ্চিতে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসটি পালন করা।

আরও পড়ুন…… 

মতামত দিন