মিয়ানমারে সংঘাত হচ্ছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আর একজন লোককেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন, সংঘাতের কারণে লোকজন অনেক সময় বর্ডারের দিকে আসে। এজন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করে রাখা হয়েছে।
সন্ধ্যায় সিলেটের লাক্কাতোড়া গলফ ক্লাব মাঠে চা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান তিনি।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে বলা হয়েছে।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে সহিংসতা চালাচ্ছে মিয়ানমার
বাংলাদেশের বান্দরবান সীমান্তের কাছে রাখাইনে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
রাখাইনের একটি বড় আকারের পুলিশ ফাঁড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির দখল আর তাদের হাতে ১৯ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার জেরে সেনাবাহিনী এই হামলা চালাচ্ছে বলে খবর এসেছে।
মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতী এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাখাইনে গত বুধবার ‘সশস্ত্র’ সংগঠন আরাকান আর্মি ১৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।
এছাড়া রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইয়ে থাকা বিদ্রোহী সংগঠনটি পুলিশ ফাঁড়িও দখল করে নিয়েছে।
আরাকান আর্মির এসব কর্মকাণ্ডের কড়া জবাব দিচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
এরই ধারবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকায় সংগঠনটিকে টার্গেট করে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে বলে ইরাবতী প্রতিবেদনে দাবি করেছে।
ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি গত ২ আগস্ট রাখাইনের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ শুরু করে।
সবশেষ বুধবার একটি ফাঁড়ি দখলের পাশাপাশি ১৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে।
এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে যায়।
মিয়ানামরের সৈন্যরা শক্তিবৃদ্ধি এবং কামান ব্যবহার করে ফাঁড়িটি পুনরায় দখল করতে নেমেছে।
হামলার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা মংডু শহর এবং পার্শ্ববর্তী বুথিডাং টাউনশিপে পালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে শনিবার সকালে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে দুটি গোলা এসে পড়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রুতে।
এর ফলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তবে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে গোলা পড়ার ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পর ওই সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি নিরাপত্তা টহল জোরদার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবারও মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল বান্দরবান সীমান্তের ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে পড়ে।
সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মিয়ানমারকে সতর্ক করেছে সরকার
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মর্টার শেল ছোড়ার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকার মিয়ানমারকে সতর্ক করেছে এবং মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে তারা ভবিষ্যতে আরো বেশি সতর্ক থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের শোকসভা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সোমবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মর্টার শেল ছোড়ার এক দিন পর বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াউ মোকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
রোববার পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রথমত এটি তদন্ত করা হবে যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এটি নিক্ষেপ দুর্ঘটনাবশত ছিল, না ইচ্ছাকৃত ছিল।
রোববার বিকেলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকায় মিয়ানমারের দুটি মর্টার শেল পতিত হওয়ার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
অবিস্ফোরিত মর্টার শেল দেখে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন …