পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবি করে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলার আবেদন করেছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।
মামলায় আসামি করা হয়েছে- পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের এসপি নাঈমা সুলতানা, পিবিআইয়ের সাবেক পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ও এ.কে.এম. মহিউদ্দিন সেলিম এবং সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবিরকে।
বনজ কুমারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে বাবুল আক্তারের মামলার আবেদন
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবি করে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালতে মামলার আবেদন করেন।
মামলার আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
তিনি বলেন, মামলায় নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ (১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, মামলার আবেদনের শুনানি হয়েছে। আদালত আদেশের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা অভিযোগ করে যা জানান
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালতে মামলা গ্রহণের শুনানিতে বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা অভিযোগ করে জানান, ২০২১ সালের ১০ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সময়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলা অফিসে বাবুল আক্তারের উপর নির্যাতন করা হয়।
স্ত্রী হত্যার ঘটনায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য বাবুল আক্তারের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা।
যা বললেন বনজ কুমার
এদিকে হঠাৎ করেই বাবুল আক্তারের মামলার আবেদনকে তদন্তে বাধা দেয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।
সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা গনমাধ্যমকে বলেছেন, বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত গুছিয়ে আনা হয়েছে।
কয়েকদিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে। তাতে বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে। সেটা জানতে পেরেই তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতেই এই আবেদন করা হয়েছে।
একই কথা বলছেন পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
মামলার আবেদন প্রসঙ্গে গনমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘তদন্ত বিলম্ব করানোর জন্য এই ধরনের কাজ করা হয়েছে। আর মামলা তদন্তে পিবিআইয়ের ব্যাপক সুনাম আছে। এই সুনাম আমরা সব সময় ধরে রেখেছি।’
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতবছরের ১১ মে বাবুল আক্তারকে ডাকে পিবিআই।
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার কথা বার্তায় সন্দেহ হলে বাবুলকে আটক দেখানো হয়। এরপর থেকে বাবুল আক্তার স্ত্রী হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত…
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গুলি করে ও কুপিয়ে মাহমুদাকে হত্যা করে দুর্বত্তরা।
এ সময় তিনি বড় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে জিইসি মোড়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার সময় বাবুল ঢাকায় ছিলেন।
পরে তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে ওই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
বাবুলের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে তার শ্বশুরের করা মামলার অভিযোগপত্রে তাকে প্রধান আসামি করা হচ্ছে।
পিবিআইয়ের দাবি, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়। অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে তিনি স্ত্রী মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
এ জন্য সোর্সের (তথ্যদাতা) মাধ্যমে তিনি তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন।
অন্যদিকে বাবুল আক্তারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া অভিযোগ করেছেন, মিতু হত্যা মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না করে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে জড়ানোতে বেশি সচেষ্ট তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে স্ত্রী হত্যায় জড়িত প্রমাণ করে বাবুলের সাজা হয়তো দেওয়া যাবে, কিন্তু এই তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মিতু হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে না।