ঢাকায় পাঁচ শতাধিক পত্রিকা, নারী সম্পাদক দুটিতে!

google news

দেশের সংবাদমাধ্যম গুলোর শীর্ষপদে নারীদের সংখ্যা খুবই কম বলে দাবি করা হয়েছে এক গবেষণায়। এতে বলা হয়, ঢাকায় পাঁচ শতাধিক পত্রিকার মাত্র দুটিতে রয়েছেন নারী সম্পাদক।

“সংবাদমাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব” শিরনামে ঢাকা-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ উন্নয়ন উদ্যোগ (এমআরডিআই) সাত দিন ধরে এই গবেষণা পরিচালনা করে।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) “বাংলাদেশে মিডিয়া ও জেন্ডার ইকুয়ালিটি” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনব্যাপী প্রচারণার অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) ও এমআরডিআই।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নির্বাহী সম্পাদক ও প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে শীর্ষ পদে আছেন মাত্র দুজন নারী।

ঢাকায় প্রায় ৫৪৯টি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। কিন্তু গবেষণায় উঠে আসে, তাদের মধ্যে মাত্র দুটিতে নারী সম্পাদক রয়েছেন।

১৮টি সংবাদমাধ্যমে ঘুরে দেখা যায়, এর মধ্যে ১৫টিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি, রাত্রিকালীন পরিবহন ও নারীদের জন্য পৃথক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুবিধা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্যদের মাত্র ৭% নারী ও ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিলের মাত্র ১৩% সদস্য নারী।

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, শুধুমাত্র 8% প্রতিবেদনের বাইলাইন ছিল নারীদের করা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, আইন প্রণেতা, সংবাদমাধ্যমের মালিক ও পেশাজীবীদের লিঙ্গ সমতা বাস্তবায়ন সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

তারা বলছে, মিডিয়াতে লিঙ্গ-ভিত্তিক নীতি প্রণয়ন পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে বলেন, “নারীদের প্রতি সহিংসতার বিষয়ে নীরবতা ভাঙতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভালো সাংবাদিকতা লিঙ্গ সংবেদনশীল এবং লিঙ্গ স্টেরিওটাইপগুলোকে শক্তিশালী করা থেকে বিরত থাকে।”

তিনি বলেন, “যখন লাখ লাখ নারী প্রতিদিন লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন তখন যদি আমরা নেতিবাচক সামাজিক নিয়মের নিদর্শন ভাঙতে চাই, তাহলে সংবাদমাধ্যমে নারীদের কীভাবে দেখানো হবে সেটিও ভাবা গুরুত্বপূর্ণ।”

সুইডিশ রাষ্ট্রদূত বলেন, “প্রায় তিনজন নারীর মধ্যে একজন তাদের জীবদ্দশায় কখনো না কখনো নির্যাতিত হয়েছেন।”

তিনি জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ও লিঙ্গ সমতা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে সুইডেনের স্থায়ী প্রতিশ্রুতির কথাও উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স থিজস ওয়াউডস্ট্রা বলেন, “সহিংসতা রোধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

তিনি বলেন, “আমি আশা করি ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভুক্তভোগীকে দোষারোপ বন্ধ করতে হবে। যৌনতাবাদী ও বৈষম্যমূলক ভাষা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।”

এমআরডিআই-এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা রোধে মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সংগঠনের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জুড উইলিয়াম জেনিলো বলেছেন: “আমরা দেখেছি বাংলাদেশে নারীদের তুলনায় পুরুষ ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, বিশেষ করে যখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। অতএব, আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির দিকে তাকাই, আমরা অগ্রগতি করেছি যাতে লিঙ্গ সমতা থাকবে।”

তিনি বলেন, “নারীদের শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে আমাদের আরও কিছু স্কিম ও প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের অগ্রগতি নিয়েও উদ্বিগ্ন কারণ তাদের আরও সহায়তা প্রয়োজন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক গীতিয়ারা নাসরীন লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে ইউল্যাবের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন।

মতামত দিন