
বছরখানেক আগে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও হয়নি সংযোগ সড়ক। সেতুর শেষ প্রান্তে রয়েছে প্রায় ৫০০ ফুট উঁচু এক বিশাল পাহাড়। এরপর রয়েছে আরও কয়েকটি ছোট-বড় পাহাড়।
বান্দরবানের রুমায় ৪ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ২৪১ টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
রুমা সদর ইউনিয়ন থেকে গ্যালাঙ্গিয়া ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে দাবি এলজিইডির। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবী সেতুটি কোনো কাজে আসছে না তাদের।
স্থানীয়রা বলছেন, জেলার অনেক জায়গায় সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। অথচ ৫০০ ফুট উচ্চতার এক পাহাড়ের মাথায় সেতুর বানিয়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা।
কর্তৃপক্ষের হতবুদ্ধির জন্য তিরস্কার করছেন রুমাবাসীসহ সেতুটি দেখতে আসা অনেকেই।
তারা মনে করছেন, সরকারি অর্থ আত্মসাতের জন্যই নির্জন এলাকায় সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে করা হয়েছে এ গার্ডার সেতুটি।
রুমায় পাহাড়ের পাদদেশে ঘেরা নির্মাণ করা সেতুটি এখন স্থানীয়দের কাছে সান্ত্বনার প্রতীক।
এলজিইডির তথ্যমতে, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৭-২০১৯ অর্থবছরে রুমা সদরের রুমার মুখ এলাকার প্রধান সড়ক থেকে ১১২০ মিটার দূরে সেতুটি নির্মাণ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স।
কাজ শেষ করে বান্দরবান এলজিইডি থেকে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা বিল নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা বলছেন, গ্যালাঙ্গিয়া ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এলজিইডি। কিন্তু রাস্তাই নেই।
রাস্তা নির্মাণ করতে হলে বিশাল পাহাড় কাটতে হবে। যদি পাহাড় কাটা হয় তাহলে সৌন্দর্য হারাবে সাঙ্গু নদীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়টি।
আবার রাস্তা নির্মাণ না হলে গচ্চা যাবে সরকারের ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা মংহ্লা প্রু মারমা বলেন, “এই সেতুটি নির্মাণের কোন দরকার ছিলনা। কারন গ্যালাঙ্গিয়া ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য বিকল্প রাস্তা আছে। পাহাড় কাটার জন্য এখানে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।”
২ নং রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শৈমং মারমা গনমাধ্যমকে বলেন, “সেতুটি আমি দেখিনি। তবে পাহাড় কাটা ঠিক হবে না। সেতুর জন্য পাহাড় কাটতে হলে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিতে হবে।”
বান্দরবান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুস শাহাদাৎ হোসেন জিল্লুর রহমান গনমাধ্যমকে বলেন, “গ্যালাঙ্গিয়া ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
সেতুটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে পাহাড় বেশি কাটতে না হয়। পাহাড়ের পাশ কেটে যাতে রাস্তা নির্মাণ করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ওই এলাকায় যাইনি। এ জন্য কয়টি পাহাড় কাটেত হবে জানি না। সেতুটির জন্য কয়টি পাহাড় কাটা লাগতে পারে তাও জানিনা”
এ ব্যাপারে বান্দরবানের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক শ্রীরুপ মজুমদার গনমাধ্যমকে বলেন, পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের কোনো আবেদন করেনি এলজিইডি। নিয়মের বাইরে গিয়ে পাহাড় কাটতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি।